Tuesday, August 22, 2017

কেস স্টাডি- পাঁচগাছিয়া জল ব্যবহারকারী সমিতি, হুগলী জেলা





হুগলী জেলার তারকেশ্বর ব্লকের অন্তর্গত একটি পিছিয়ে পড়া গ্রাম পাঁচগাছিয়া।এই গ্রামে মোট ১৮৭ টি পরিবার বসবাস করে,যাদের মূল জীবিকা হল কৃষিকাজ।কৃষিকাজ প্রধান জীবিকা হলেও নিশ্চিত করে কোনো সেচের ব্যবস্হা না থাকার জন্য শুধু মাত্র বৃষ্টির জলের উপরেই নির্ভর করতে হতো।এই পিছিয়ে পড়া গ্রামটি তারকেশ্বর থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত ও যাতায়াত ব্যবস্হার দৈন্যতার জন্য কৃষি ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প জীবিকার ব্যবস্হা ছিল না।এমত অবস্হা্য চরম আর্থিক অনটন ও অচলবস্হা্র মধ্য দিয়ে চলছিল গ্রামটি।মানব উন্নয়ন সুচকের দিক থেকেও গ্রামটি ক্রমেই অবনতির দিকে এগোচ্ছিল,এমত অবস্হায় ভগবানের আর্শীবাদ স্বরুপ গ্রামের মানুষ /চাষীরা খবর পেলেন একফসলী জমিকে বহুফসলী করার জন্য ভগবানের অবতার স্বরুপ আদমী নামে একটি প্রকল্প এসেছে।শো্না মাত্রই ২০১১-১২ সালে তারকেশ্বরের সহকারী বাস্তুকারের কাছে গ্রামের সকল চাষীরা মিলে একটি গণ আবেদন করলেন।এই গণ আবেদনের ভিত্তিতে ২০১২ সালে মাঝারি ক্ষমতা সম্পন্ন (এম.ডি.টি.ডব্লু)নলকুপের কাজ শুরু হয়,যার সেচ সেবিত এলাকা হল ২০ হেক্টর

এই ২০ হেক্টর জমিতে চাষের ওপর নির্ভরশীল মোট পরিবারের সংখ্যা  ৮৮ টি।প্রকল্পটির শর্ত অনুযায়ী এলাকার সকল  পরিবারের চাষীদের নিয়ে তৈরী হয় পাঁচগাছিয়া এম.ডি.টি.ডব্লু জল ব্যবহারকারী সমিতি।২০১২ সালে তৈরী হওয়া ঐ জল ব্যবহারকারী সমিতিই এখন গ্রামের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মুল কান্ডারী।২০১৪ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবার পর জল ব্যবহারকারী সমিতিকে এটিকে হস্তান্তরিত করা হয়।

২০১৪ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত জল ব্যবহারকারী সমিতির সকল সদস্যদের সহমতের ভিত্তিতে এলাকার সেচ ব্যবস্থা ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহন ও রুপায়ন করা হয় সহভাগী সেচ  পরিচালন ব্যবস্থার মাধ্যমে।সহভাগী সেচ ব্যবস্থা পরিচালনা করতে গিয়ে তারা বুঝতে পারেন আপদকালীন অবস্থা থেকে বের হবার জন্য সমিতির কাছে বেশ কিছু পরিমান টাকার সংস্থান থাকা জরুরী।একথা মাথায় রেখেই জল ব্যবহারকারী সমিতির সকল সদস্য সহমত হন এককালীন অনুদান,মাসিক চাঁদার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে।

  এরপর এলাকার সাধারণ চাষীরা জলব্যবহারকারী সমিতিকে আরো সক্রিয় ও স্বয়ংক্রিয় করে তোলেন এবং প্রাপ্তব্য সকল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে নিজ উদ্যেগে প্রকল্পটিতে আরো বাস্তব সম্মত করার জন্য নানাবিধ কার্য প্রণালী রুপায়ন করেন।
সেগুলি হল-
১)জলের অপচয় কমানোর জন্য প্রতিটি স্পাউটে দুই মুখ ওয়ালা সকেট তৈরী করেছে(মূল্যঃ আনুমানিক ১৫০০০ টাকা)
২)নিজস্ব তহবিল বৃদ্ধি করার জন্য সামাজিক বনসৃজন করেছিল স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সাথে মেল বন্ধন করে
৩) জলব্যবহারকারী সমিতির কাজের জন্য আসবাবপত্র তৈরী করেছেন(মূল্যঃ আনুমানিক ৫০০০ টাকা)।
৪)এলাকার চাষীদের মধ্যে তিল,ধান,সরিষার বীজ বিতরণ করেছে(শস্য ভান্ডার ব্যবহার করে)
৫)পাম্প হাউস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত পুকুরের পাড় বাঁধানো(মূল্যঃ আনুমানিক ১২০০০ টাকা)
৬)কৃষিযন্ত্রপাতি রাখার জন্য পাম্প হাউস সংলগ্ন এলাকায় একটি পাকা ঘর তৈরী করেছেন(মূল্যঃ আনুমানিক ৬৯০০০ টাকা)
৭)জলের অপচয় রোধ করার ডেলিভারী পাইপ ক্রয় করেছেন(মূল্যঃ আনুমানিক ৫৭০০ টাকা)
৮)স্বতঃপ্রনোদিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে পাম্প হাউসে ও গ্রামের নানা জায়গায়(মূল্যঃ আনুমানিক ৪৫০০ টাকা)।
৯)ডিস্ট্রিবিউশন চেম্বার ও ইম্পলিমেন্ট হাব রঙ করা(আনুমানিক মূল্যঃ আনুমানিক ৮০০০ টাকা)।
১০)সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে জল ব্যবহারকারী সমিতি চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা সহায়তা মূলক কাজ করেছেন।

আমাদের চলার পথকে আরো দৃঢ় ও অনুপ্রাণিত করেছে ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে শ্রেষ্ঠ জল ব্যবহারকারী সমিতির পুরস্কার।
(Courtesy: DPMU, Hooghly)


No comments:

Post a Comment